Type Here to Get Search Results !

Mahatma vs Gandhi || Rehearsal photos || Chetana || Srishti bangla

 Mahatma vs Gandhi

Rehearsal photos

মহাত্মার ভূমিকায় অনির্বাণ, পুত্র হরিলাল হয়ে সুজন মঞ্চে আনছেন

 ‘মহাত্মা বনাম গান্ধী’


জাতির জনক যদি সন্তানেরও জনক হন, তা হলে দেশ আগে, না সন্তান? সেই অসমীকরণের উত্তর মেলেনি মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিজীবনেও। যে ইতিহাস বেশিটাই আড়ালে থেকে গিয়েছে। জ্যেষ্ঠপুত্র হরিলাল গান্ধী পিতৃস্নেহের স্বাদ পেতে ছটফট করেছেন, কিন্তু পেয়েছেন কি? ‘বাপু’র স্নেহ তাঁর একার নয়, সবার মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এতে মোহনদাস করমচাঁদেরই বা কী দোষ, তিনি যে ‘মহাত্মা’! পুত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া তাঁর সাজে না। পিতা-পুত্রের এই টানাপড়েনের বৃত্তান্ত উঠে আসবে ‘চেতনা’-র নতুন নাটক ‘মহাত্মা বনাম গান্ধী’তে



নাম কেন? পরিচালক সুজন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এক দিকে তিনি মহাত্মা, জাতির জনক, সারা বিশ্বের বাপু, অন্য দিকে তিনি সন্তানের পিতা। তাঁরই জ্যেষ্ঠপুত্র হরিলাল গান্ধী। এই নাটকে দ্বন্দ্বের সুর বাঁধা জাতির পিতা ও পরিবারের পিতার মধ্যে। অনেকেই এই ইতিহাস জানেন না। হরিলালের সঙ্গে গান্ধীজির ভাবনা, আদর্শের দুস্তর দূরত্ব, নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতের কাহিনি এই প্রথম বার দেখা যাবে বাংলা নাটকে।’’


বৃহত্তর আদর্শের জন্য লড়তে গিয়ে কোথাও কি পারিবারিক মানুষ হিসাবে, পুত্রের পিতা হিসাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন গান্ধীজি? সুজনের কথায়, ‘‘বাবার সঙ্গে আদর্শগত ব্যবধান বাড়তে বাড়তে ক্রমে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন হরিলাল। গান্ধীর মৃত্যুর ছ’মাসের মধ্যেই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছিল তাঁর। এই ট্র্যাজেডির ইতিহাস থাকছে নাটকে।

দর্শক কি তা হলে না-জানা ইতিহাস জানতে দেখতে আসবেন এই নাটক? সুজন বললেন, ‘‘ইতিহাস তো কমবেশি সব নাটকেই আছে। ইতিহাসের প্রেক্ষিতেই আমরা সমকালকে যাচাই করি। সে ‘ব্যারিকেড’ হোক বা ‘মেফিস্টো’। এই নাটক আসলে বাবা-ছেলের আদর্শগত দ্বন্দ্বের চিরন্তন কাহিনি। সেই কাহিনির পরতে পরতে আছে ইতিহাসের সত্য। একটা খুব পরিচিত পরিবারের গল্প দেখতে এসে ইতিহাসকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করবেন দর্শক।’’

কস্তুরবা (গান্ধীর স্ত্রী) চরিত্রটিরও অনেকটা ভূমিকা আছে এই নাটকে। বাবা-ছেলের সংঘর্ষের মাঝে তাঁর নিজস্ব মতামত কী? কোথায় তাঁর লড়াই? সে সব কথাও বলবে কমবেশি তিন ঘণ্টার এই প্রযোজনা। সুজনকে টেনেছে নাটকের মানবিক দিকটা। প্রায় চারশো পাতার উপন্যাসকে নাট্যরূপ দিয়েছিলেন অজিত দলভী। ‘গান্ধী, মাই ফাদার’ (২০০৭) ছবিটিও হয়েছিল এই কাহিনি নিয়েই। কোভিডকালে সেই ছবি দেখতে দেখতেই এই নাটকের কথা মাথায় আসে পরিচালক সুজনের। নাট্যকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইংরেজি এবং হিন্দি স্ক্রিপ্ট হাতে পান তিনি। তার বঙ্গীকরণ ঘটেছে অরুণ মুখোপাধ্যায়ের হাতে। নাটকে আবহসঙ্গীতের দায়িত্ব সামলেছেন প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেক ভাষায় এই নাটকের অভিনয় হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষায় এই প্রথম। মঞ্চের সময়ের বাঁধন মেনে কিছু কাটছাঁট করতে হলেও অভিমান, আদর্শ, লড়াই— মনস্তত্ত্বের নানা স্তর ছুঁয়ে যাবে এই প্রযোজনা।

নাটকে গান্ধীর চরিত্রে থাকছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী, হরিলাল করবেন সুজন নিজেই। কস্তুরবার চরিত্রে নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় এবং হরিলালের স্ত্রী গুলাব গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করবেন মেরী আচার্য। গান্ধীর মতো ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গে চেহারাগত সাদৃশ্য তো তেমন নেই। কী ভাবে চরিত্রটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী? তাঁর কথায় ‘‘বিশেষত ঐতিহাসিক চরিত্রে চেহারার বাইরের আদলটা অবিকল অনুসরণ করা চলচ্চিত্রে যতটা প্রয়োজন, থিয়েটারে ততটা নয়। সেখানে চরিত্রটাকে নির্মাণ করা, নাটকটার মধ্যে দিয়ে যা বলতে চাওয়া হয়েছে, সেটাকে প্রকাশ করাটাই বেশি জরুরি। দর্শক কিন্তু অনেক কিছু মেনেও নেন এই বাইরের পরিবর্তনগুলির সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে। না হলে তো আমরা প্রস্থেটিক মেকআপের কথাও ভাবতে পারতাম।’’


অভিনেতা জানান, তিনি গান্ধী চরিত্রটি সম্পর্কে আরও গভীরে গিয়ে জানতে চাইছেন। আবিষ্কার করতে চাইছেন মানুষটিকে। হরিলালের সঙ্গে গান্ধীজির আদর্শ এবং জীবনবোধের যে দ্বন্দ্ব, সেটাকেই ধরতে চাইছেন। এই নাটক করতে গিয়ে মূল উপন্যাস পড়ছেন, অন্য রেফারেন্স দেখছেন, ছবি দেখছেন। এই ভাবেই চলছে প্রস্তুতি। অভিনেতার মতে, গান্ধীজিকে এক এক জন এক এক ভাবে দেখেন। নানা চোখে দেখা অনেক গান্ধীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটা মূল সুর তুলে ধরাই তাঁর লক্ষ্য।

নববর্ষের শুরুতেই গ্রুপ থিয়েটারের ৭৫ বছর উপলক্ষে ‘মুখোমুখি’ নাট্যদলের উদ্যোগে রবীন্দ্র সদনে অভিনীত হবে আটটি নতুন নাটক। এটি ‘মুখোমুখি’রও ৩০ বছর। ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেই উৎসবেই প্রথম অভিনীত হবে ‘মহাত্মা বনাম গান্ধী’।


Advertisement

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.